Swami Vivekananda Quotes Bengali, Bibekananda Bani In Bengali
Swami Vivekananda Quotes In Bengali 2024 : Are You Searching For Thoughts By Swami Vivekananda In Bengali To Share With your beloved one?. Then You Are At Perfect Place, We At Explore Quotes Have Collected Swami Bibekananda Quotes. The Following Words Best Describe This Page. Swami Vivekananda Bani In Bengali, Swami Vivekananda Bengali Quotes, Swami Vivekananda Quotes In Bengali, Swami Vivekananda Quotes In Bengali Language, Swami Vivekananda Thoughts In Bengali For You. Please Have A Look And Don’t Forget To Share This Unique Collection On Facebook, Whatsapp If You Like It.
Swami Bibekananda Quotes
অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।।
অর্থাৎ যারা আর কারও ওপর নির্ভর না ক’রে কেবল আমার ওপর নির্ভর ক’রে থাকে, তাদের যা কিছু দরকার, সব আমি যুগিয়ে দিই। ভগবানের এ কথাটা তো আর স্বপ্ন বা কবিকল্পনা নয়।
অন্ন! অন্ন! যে ভগবান এখানে আমাকে অন্ন দিতে পারেন না তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত স্বুখে রাখিবেন—ইহা আমি বিশ্বাস করি না।
আজকাল লোকে ‘যোগ্যতমের উদবর্তন’ (Survival of the fittest)—রূপ নূতন মতবাদ লইয়া অনেক কথা বলিয়া থাকে। তাহারা মনে করে—যাহার গায়ের জোর যত বেশী, সেই তত অধিক দিন জীবিত থাকিবে। যদি তাহাই সত্য হইত, তবেপ্রাচীনকালের যে-সকল জাতি কেবল অন্যান্য জাতির সহিত যুদ্ধ—বিগ্রহে কাটাইয়াছে, তাহারাই মহাগৌরবের সহিত আজও জীবিত থাকিত এবং এই হিন্দুজাতি, যাহারা অপর একটি জাতিকে জয় করে নাই, তাহারাই এতদিন বিনষ্ট হইয়া যাইত। জনৈকা ইংরেজ মহিলা আমাকে এক সময় বলেন, হিন্দুরা কি করিয়াছে? তাহারা কোন একটা জাতিকেও জয় করিতে পারে নাই! পরন্তু এই জাতি এখনও ত্রিশকোটি প্রাণী লইয়া সদর্পে জীবিত রহিয়াছে! আর ইহা সত্য নহে যে, উহার সমুদয় শক্তি নিঃশেষিত হইয়াছে; ইহাও কখন সত্য নহে যে, এই জাতির শরীর পুষ্টির অভাবে ক্ষয় পাইতেছে। এই জাতির এখনও যথেষ্ট ছরহিয়াছে। যখনই উপযুক্ত সময় আসে, যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই এই জীবনীশক্তি মহাবন্যার মতো প্রবাহিত হইয়া থাকে।
আদান-প্রদানই প্রকৃতির নিয়ম ; ভারতের যদি আবার উঠিতে হয়, তবে তাহাকে নিজ ঐশ্বর্য-ভান্ডার উন্মুক্ত করিয়া পৃথিবীর সমুদয় জাতির ভিতর ছড়াইয়া দিতে হইবে এবং পরিবর্তে অপরে যাহা কিছু দেয়,তাহাই গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে ।
আপানার ভাল কেবল পরের ভালয় হয়, আপনার মুক্তি এবং ভক্তিও পরের মুক্তি ও ভক্তিতে হয়—তাইতে লেগে যাও, মেতে যাও, উন্মাদ হয়ে যাও। ঠাকুর যেমন তোমাদের ভালবাসতেন, আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসি, তোমারা তেমনি জগৎকে ভালবাস দেখি ।
আমাদিগকে বড়বড় কাজ করিতে হইবে, অদ্ভুত শক্তির বিকাশ দেখাইতে হইবে, অপর জাতিকে অনেক বিষয় শিখাইতে হইবে। দর্শন ধর্ম বা নীতিবিজ্ঞানই বলুন অথবা মধুরতা কোমলতা বা মানবজাতির প্রতি অকপট প্রীতিরূপ সদ্গুনরাজিই বলুন, আমাদের মাতৃভূমি এ-সব কিছুরই প্রসূতি। এখনও ভারতে এইগুলি বিদ্যমান আছে আর পৃথিবী সম্বন্ধে যতটুকু অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি, তাহাতে আমি এখন দৃঢ়ভাবে সাহসের সহিত বলিতে পারি, এখনও ভারত এই সকল বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই আশ্চর্য ব্যাপারটি লক্ষ্য করিয়া দেখুন।
আমাদের জাতের কোনও ভরসা নাই। কোনও একটা স্বাধীন চিন্তা কাহারও মাথায় আসে না—সেই ছেঁড়া কাঁথা, সকলে পড়ে টানাটানি—
আমাদের জাতীয় জীবন অতীতকালে মহৎ ছিল ,তাহাতে সন্দেহ নাই , কিন্তু আমি অকপটভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের ভবিষ্যত আরও গৌরবান্বিত।
আমাদের দেশের লোকের না আছে ভাব, না আছে সমাদর করিবার ক্ষমতা। পরন্তু সহস্র বৎসরের পরাধীনতার ফলে উৎকট পরশ্রীকাতরতা ও সন্দিগ্ধ প্রকৃতির বশে ইহারা যে-কোন নূতন ভাবধারারই বিরোধী হইয়া উঠে।
আমাদের দেশের শটকরা নব্বই জনই অশিক্ষিত,অথচ কে তাহাদের বিষয় চিন্তা করে ? এইসকল বাবুর দল কিংবা তথাকথিত দেশহিতৈষীর দল কি ?
আমাদের বিশ্বাস—সব প্রাণীই ব্রহ্মস্বরূপ। প্রত্যেক আত্মাই যেন মেঘে ঢাকা সূর্যের মতো; একজনের সঙ্গে আর একজনের তফাত কেবল এই—কোথাও সূর্যের উপর মেঘের আবরণ ঘন, কোথাও এই আবরণ একটু পাতলা; আমাদের বিশ্বাস-জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইহা সকল ধর্মেরই ভিত্তিস্বরূপ; আর শারীরিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক স্তরে মানবের উন্নতির সমগ্র ইতিহাসের সার কথাটাই এই-এক আত্মাই বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে আপনাকে প্রকাশ করছেন।
আমাদের মতো কূপমণ্ড ক তো দুনিয়ায় নাই। কোন একটা নূতন জিনিস কোন দেশ থেকে আসুক দিকি, আমেরিকা সকলের আগে নেবে। আর আমরা? ‘আমাদের মতো দুনিয়ায় কেউ নেই, ‘আর্য’ বংশ!!!’ কোথায় বংশ তা জানি না!…এক লাখ লোকের দাবানিতে ৩০০ মিলিয়ান (ত্রিশ কোটি) কুকুরের মত ঘোরে, আর তারা ‘আর্যবংশ’!!!
Bibekananda Bani In Bengali
আমার ধারণা, বেদান্ত —কেবল বেদান্তই সার্বভৌম ধর্ম হইতে পারে, আর কোন ধর্মই নয়।
আমার লক্ষ্য কেবল ভেতরের আত্মতত্ত্বের দিকে; সেইটি যদি ঠিক হয়ে যায়, তবে আর সবই ঠিক হয়ে যাবে—এই আমার মত।
আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি, মানুষকে বিশ্বাস করি; দুঃখী দরিদ্রকে সাহায্য করা, পরের সেবার জন্য নরকে যাইতে প্রস্তুত হওয়া—আমি খুব বড় কাজ বলিয়া বিশ্বাস করি।
আমি চাই, যেন আমাদের মধ্যে কোনরূপ কপটতা, কোনরূপ লুকোচুরি ভাব, কোনরূপ দুষ্টামি না থাকে। আমি বরাবরই প্রভুর উপর নির্ভর করিয়াছি, দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল সত্যের উপর নির্ভর করিয়াছি। আমার বিবেকের উপর এই কলঙ্ক লইয়া যেন মরিতে না হয় যে, আমি নামের জন্য, এমন কি, পরের উপকার করিবার জন্য লোকোচুরি খেলিয়াছি। একবিন্দু দুর্নীতি, বদ মতলবের একবিন্দু দাগ পর্যন্ত যেন না থাকে ।
আমি দৃঢ়ভাবে বলিতেছি, হিন্দুসমাজের উন্নতির জন্য ধর্মকে নষ্ট করিবার কোন প্রয়োজন নাই এবং ধর্মের জন্যেই যে সমাজের এই অবস্থা তাহা নহে, বরং ধর্মকে সামাজিক ব্যাপারে যেভাবে কাজে লাগানো উচিত, তাহা হয় নাই বলিয়াই সমাজের এই অবস্থা।
ইচ্ছাশক্তিই জগতকে পরিচালিত করিয়া থাকে।
ঈশ্বরই তাঁহার সন্তানগণকে সমুদ্রগর্ভে রক্ষা করিয়া থাকেন!
ঈশ্বরের অন্বেষণে কোথায় যাইতেছ? দরিদ্র, দুঃখী, দুর্বল—সকলেই কি তোমার ঈশ্বর নহে? অগ্রে তাহাদের উপাসনা কর না কেন? গঙ্গাতীরে বাস করিয়া কূপ খনন করিতেছ কেন? প্রেমের সর্বশক্তিমত্তায় বিশ্বাস কর।
এই কথা মনে রেখো—দুটো চোখ, দুটো কান, কিন্তু একটা মুখ। উপেক্ষা উপেক্ষা, উপেক্ষা। ‘ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিৎ দুর্গাতিং তাত গচ্ছতি’।
‘এই জগতে ধনের সন্ধান করিতে গিয়া তোমাকেই শ্রেষ্ঠ রত্নরূপে পাইয়াছি; হে প্রভো, তোমারই নিকট আমি নিজেকে বলি দিলাম ।’
‘ভালবাসার পাত্র খুঁজিতে গিয়া একমাত্র তোমাকেই ভালবাসার পাত্র পাইয়াছি। আমি তোমারই নিকট আমি নিজেকে বলি দিলাম।’ (যজুর্বেদ সংহিতা )
একটা পুরানো গল্প শোন। একটা লোক রাস্তা চলতে চলতে একটা বুড়োকে তার দরজার গোড়ায় বসে থাকতে দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে—’ভাই, অমুক গ্রামটা এখান থেকে কতদূর? ‘বুড়োটা কোন জবাব দিলে না। তখন পথিক বার বার জিজ্ঞাসা করেত লাগলো, কিক্ত বুড়ো তবু চুপ ক’রে রইল। পথিক তখন বিরক্ত হয়ে আবার রাস্তায় গিয়ে চলবার উদ্যেগ করলে। তখন বুড়ো দাঁড়িয়ে উঠে পথিককে সম্বোধন ক’রে বললে, ‘আপনি অমুক গ্রামটার কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন—সেটা এই মাইল-খানেক হবে।’ তখন পথিক তাকে বললে, ‘তোমাকে এই একটু আগে কতবার ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তো তুমি একটা কথাও কইলে না—এখন যে ব’লছ, ব্যাপারখানা কি ?’ তখন বুড়ো বললে, ‘ঠিক কথা। কিন্তু প্রথম যখন জিজ্ঞাসা করছিলেন, তখন চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলেন, আপনার যে যাবার ইচ্ছে আছে, ভাব দেখে তা বোধ হচ্ছিল না—এখন হাঁটতে আরম্ভ করেছেন, তাই আপনাকে বললাম।’
হে বৎস, এই গল্পটা মনে রেখো। কাজ আরম্ভ ক’রে দাও, বাকি সব আপনা-আপনি হয়ে যাবে।
Quotation Of Swami Vivekananda In Bengali
একটি কথা—মহাপুরুষেরা বিশেষ শিক্ষা দিতে আসেন, নামের জন্যে নহে, কিন্তু চেলারা তাঁদের উপদেশ বানের জ্বলে ভাসাইয়া নামের জন্য মারামারি করে—এই তো পৃথিবীর ইতিহাস।
এদেশে (আমেরিকা) কেহ যদি উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে থাকে তবে সকলের তাহার সহায়তা করিতে প্রস্তুত । আর ভারতবর্ষে কাল যদি কোন একটি পএিকায় আপনি আমার প্রশংসা করিয়া এক ছাত্র লেখেন,তবে পরদিন দেশসুদ্ধ সকলে আমার বিপক্ষে দাঁড়াইবে । ইহার হেতু কি ? হেতু-দাসসুলভ মনোবৃত্তি । নিজেদের মধ্যে কেহ সাথারণ স্তর হইতে একটু মাথা উঁচু কলরিয়া দাঁড়াইবে,ইহা তাহাদের পক্ষে অসহ্য ।
এস, মানুষ হও। নিজেদের সংকীর্ণ গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে গিয়ে দেখ, সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে। তোমরা কি মানুষকে ভালবাসো? তোমরা কি দেশকে ভালবাসো? তাহলে এস, আমরা ভাল হবার জন্য—উন্নত হবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করি।
কলকাতায় বন্ধুদের এদিকে একবিন্দু ক্ষমতা নেই, অথচ হামবড়াইটা খুব আছে—তারা নিজেদের এত বড় মনে করে যে, অপরের পরামর্শ শুনতে একদম নারাজ। এই অদ্ভুত ভদ্রলোকদের নিয়ে যে কি ক’রব তা বুঝি না—তাদের কাছ থেকে বেশী কিছু আশা করি না।
কাজ চিরকালই ধীরে ধীরে হয়ে এসেছে, চিরকালই ধীরে হবে; এখন ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ ক’রে শুধু কাজ করেই খুশী থাকো; সর্বোপরি, পবিত্র ও দৃঢ়-চিত্ত হও এবং মনে প্রাণে অকপট হও—ভাবের ঘরে যেন এতটুকু চুরি না থাকে, তা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কারও ওপর হুকুম চালাবার চেষ্টা ক’রো না—যে অপরের সেবা করতে পারে, সেই যথার্থ সর্দার হ’তে পারে।
কার্যক্ষেত্রে অবতরণ কর। কুড়েমির কাজ নয়। ঈর্ষা অহমিকাভাব গঙ্গার জলে জন্মের মতো বিসর্জন দাও ও মহাবলে কাজে লাগিয়া যাও। বাকি প্রভু সব পথ দেখাইয়া দিবেন। মহা বন্যায় সমস্ত পৃথিবী ভাসিয়া যাইবে।
কার্যসিদ্ধর জন্য আমার ছেলেদের আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এখন কেবল কাজ, কাজ, কাজ-বছর কতক বাদে স্থির হয়ে কে কতদূর করলে মিলিয়ে তুলনা ক’রে দেখা যাবে। ধৈর্য’অধ্যবসায় ও পবিত্রতা চাই ।
কি কারণে হিন্দুজাতি তাহার অদ্ভুত বুদ্ধি এবং অন্যান্য গুণাবলী সত্ত্বেও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল? আমি বলি, হিংসা। এই দুর্ভাগা হিন্দুজাতি পরস্পরের প্রতি যেরূপ জঘন্যভাবে ঈর্ষান্বিত এবং পরস্পরের যশখ্যাতিতে যেভাবে হিংসাপরায়ণ, তাহা কোন কালে কোথাও দেখা যায় নাই।
কিসের জোরে মানুষ উঠিয়া দাঁড়ায় ও কাজ করে?—শক্তির জোরে;এই বল—বীর্যই ধার্মিকথা, দুর্বলতাই পাপ। যদি উপনিষদে এমন কোন শব্দ থাকে, যাহা বজ্রবেগে অজ্ঞান রাসির উপর পতিত হইয়া উহাকে একেবারে ছিন্ন—ভিন্ন করিয়া ফেলিতে পারে, তবে তাহা ‘অভীঃ’। যদি জগৎকে কোন ধর্ম শিখাইতে হয়, তবে তাহা এই ‘অভীঃ’। কি ঐহিক, কি আধ্যাত্মিক সকল বিষয়েই ‘অভীঃ’—এই মূলমন্ত্র অবলম্বন করিতে হইবে। কারণ ভয়ই পাপ ও অধঃপতনের নিশ্চিত কারণ। ভয় হইতেই মৃত্যু, ভয় হইতেই সর্বপ্রকার অবনতি আসে।
‘কেউ তোমাকে বলবে সাধু, কেউ বলবে চণ্ডাল, কেউ বলবে উন্মাদ, কেউ বলবে দানব, কোনদিকে না তাকিয়ে নিজের পথে চলে যাও,’—এই কথা বলেছিলেন বার্ধক্যে সন্ন্যাসগ্রহণকারী রাজা ভর্তৃহরি—ভারতের একজন প্রাচীন সম্রাট ও মহান্ সন্ন্যাসী।
কোন ধর্মকে ফলপ্রসূ করতে হ’লে তাই নিয়ে একেবারে মেতে যাওযা দরকার; অথচ যাতে সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক ভাব না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
জগতে যদি কিছু পাপ থাকে, তবে দুর্বলতাই সেই পাপ। সর্বপ্রকার দুর্বলতা ত্যাগ কর— দুর্বলতাই মৃত্যু, দুর্বলতাই পাপ।
জগতের ইতিহাস হইল – পবিত্র, গম্ভীর, চরিত্রবান্ এবং শ্রদ্ধাসম্পন্ন কয়েকঠ মানুষের ইতিহাস। আমাদের তিনটি বস্তুর প্রয়োজন – অনুভব করিবার হৃদয়, ধরণা করিবার মস্তষ্ক এবং কাজ করিবার হাত।
জগৎ উচ্চ উচ্চ নীতির (principles) জন্য আদৌ ব্যস্ত নয়; তারা চায় ব্যক্তি (person)। তারা যাকে পছন্দ করে, তার কথা ধৈর্যের সহিত শুনবে, তা যতই অসার হোক না কেন—কিন্তু যাকে তারা পছন্দ করে না, তার কথা শুনবেই না ।
…জনৈক সংস্কৃত কবি বলিয়াছেন, ‘ন গৃহং গৃহমিত্যাহুর্গৃহিণী গৃহমুচ্যতে’—গৃহকে গৃহ বলে না, গৃহিণীকেই গৃহ বলা হয়, ইহা কত সত্য! যে গৃহছাদ তোমায় শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হইতে রক্ষা করিয়া থাকে, তাহার দোষগুণ বিচার করিতে হইলে উহা যে স্তম্ভগুলির উপর দাঁড়াইয়া আছে, তাহা দেখিলে চলিবে না—হউক না সেগুলি আতি মনোহর কারুকার্যময় ‘করিন্থিয়ান’ স্তম্ভ।
জতিভেদ থাকুক বা নাই থাকুক, কোন মতবাদ প্রচলিত থাকুক বা নাই থাকুক, যে-কোন ব্যক্তি, শ্রেণী, বর্ণ, জাতি বা সম্প্রদায় যদি অপর কোন ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার ও কার্যের শক্তিতে বাধা দেয় (অবশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ শক্তি কাহারও অনিষ্ট না করে) তাহা অতি অন্যায়, এবং যে ঐরূপ করে—তাহার পতন অবশ্যম্ভাবী।
জীবনটা ক্ষণস্থায়ী স্বপ্নমাত্র, যৌবন ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়; দিবারাত্র বল, ‘তুমি আমার পিতা, মাতা, স্বামী, দয়িত, প্রভু, ঈশ্বর—আমি তোমা ছাড়া আর কিছু চাই না, আর কিছুই চাই না, আর কিছুই না। তুমি আমাতে, আমি তোমাতে—আমি তুমি, তুমি আমি।’ ধন চলে যায়, সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যায়, জীবন দ্রুতগতিতে চলে যায়, শক্তি লোপ পেয়ে যায়, কিন্তু প্রভু চিরদিনই থাকেন—প্রেম চিরদিনই থাকে।
তিনি সকলেরই হৃদয়ে বিরাজ করিতেছেন। যদি দর্পণের উপর ধূলি ও ময়লা থাকে, তবে তাহাতে আমরা আমাদের চেহারা দেখিতে পাই না। আমাদের হৃদয় দর্পণেও এইরূপ অজ্ঞান ও পাপের ময়লা রহিয়াছে।
তুমি তোমার কাজ ক’রে যাও, আর মনে রেখো—’ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিত দুর্গতিং তাত গচ্ছতি।’
Swami Bibekananda Bani In Bengali
তোমরা যদি আমার সন্তান হও, তবে তোমার কিছুই ভয় করবে না, কিছুতেই তোমাদের গতিরোধ করতে পারবে না। তোমারা সিংহতুল্য হবে। ভারতকে—সমগ্র জগৎকে জাগাতে হবে। এ না করলে চলবে না, কাপুরুষতা চলবে না—বুঝলে? মৃত্যু পর্যন্ত অবিচলিতভাবে লেগে পড়ে থেকে আমি যামন দেখাচ্ছি, ক’রে যেতে হবে—তবে তোমার সিদ্ধি নিশ্চিত ।
তোমরা সকলে ভাবো—’আমরা অনন্ত বলশালী আত্মা’; দেখ দিকি কি বল বেরোয়। ‘দীনহীনা!’ কিসের ‘দীনহীনা’? আমি ব্রহ্মময়ীর বেটা! কিসের রোগ, কিসের ভয়, কিসের অভাব? ‘দীনহীনা’ ভাবকে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় কর দিকি।
তোমাদের কি মন মুখ এক হয়েছে? তোমরা কি মৃত্যুভয় পর্যন্ত তুচ্ছ ক’রে নিঃস্বার্থভাবে থাকতে পার? তোমাদের হৃদয়ে প্রেম আছে তো? যদি এইগুলি তোমাদের থাকে তবে তোমাদের কোন কিছুকে, এমন কি মৃত্যুকে পর্যন্ত ভয় করবার দরকার নেই। এগিয়ে যাও, বৎসগণ। সমগ্র জগৎ জ্ঞানালোক চাইছে—উৎসুক নয়নে তার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
দাদা, এ সব লিখিবার নহে, বলিবার নহে। আমার পত্র অন্য কেউ যেন না পড়ে, তোমরা ছাড়া। হাল ছেড় না, টিপে ধরে থেক—পাকড় ঠিক বটে, তাতে আর ভুল নাই—তবে পারে যাওয়া আজ আর কাল—এই মাত্র। দাদা, leader (নেতা) কি বানাতে পারা যায়? Leader জন্মায়। বুঝতে পারলে কিনা? লিডারি করা আবার বড় শক্ত—দিসস্য দাসঃ, হাজারো লোকের মন যোগানো। Jealousy, selfishness ( ঈর্ষা, স্বার্থপরতা ) আদপে থাকবে না—তবে leader. প্রথম by birth (জন্মগত), দ্বিতীয় unselfish ( নিঃস্বার্থ ), তবে leader. সব ঠিক হচ্ছে, সদ ঠিক আসবে, তিনি ঠিক জাল ফেলছেন, ঠিক জাল গুটাচ্ছেন—বয়মনুসরামঃ, বয়মনুসরামঃ, প্রীতিঃ পরমসাধনম্ বুঝলে কি না? Love conquers in the long run, দিক্ হলে চলবে না—wait, wait (অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর); সবুরে মেওয়া ফলবেই ফলবে। যোগেনের কথা কিছুই লেখ নাই। রাখাল-রাজা ঘুরে ফিরে পুনর্বৃন্দাবনং গচ্ছেদিতি।…
ধৈর্য, পবিত্রতা ও অধ্যবসায়ের জয় হবে।
নিরাশ হইও না। স্মরণ রাখিও, ভগবান গীতায় বলিতেছেন, ‘কর্মে তোমার অধিকার, ফলে নয়।’
দৃঢ়ভাবে কার্য করিয়া যাও, অবচলিত অধ্যবসায়শীল হও এবং প্রভুর উপর বিশ্বাস রাখো।
ধীর, নিস্তব্ধ অথচ দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে। খবরের কাগজে হুজুক করা নয়। সর্বদা মনে রাখবে, নামযশ আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
পবিত্রতা, সহিষ্ণুতা ও অধ্যবসায়—এই তিনটি, সর্বোপরি প্রেম সিদ্ধিলাভের জন্য একান্ত আবশ্যক।
পাহাড় যদি মহম্মদের নিকট না যায়, মহম্মদ পাহাড়ের নিকট যাবেন। অর্থাৎ গরীবের ছেলেরা যদি স্কুলে লেখাপড়া শিখতে না পারে, বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের শিখাতে হবে।
পূর্ণত্বলাভের পথ এই যে, নিজে ঐরূপ চেষ্টা করতে হবে এবং অন্যান্য স্ত্রী-পুরুষ যারা সচেষ্ট তাদের যথাশক্তি সাহায্য করতে হবে।
প্রত্যেক দাসজাতির মূল পাপ হচ্ছে ঈর্ষা। আবার এই ঈর্ষা দ্বেষ ও সহযোগিতার অভাবই এই দাসত্বকে চিরস্থায়ী ক’রে রাখে। ভারতের বাইরে না এলে আমার এ মন্তব্যের মর্ম বুঝবে না।
প্রত্যেকের আদর্শ ভিন্ন ভিন্ন। ভারতের আদর্শ ধর্মমুখী বা অন্তর্মুখী, পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক বা বহির্মুখী। পাশ্চাত্য এতটুকু আধ্যাত্মিক উন্নতিও সমাজের উন্নতির ভিতর দিয়া করিতে চায়, আর প্রাচ্য এতটুকু সামাজিক শক্তিও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে দিয়া লাভ করিতে চায়।
প্রিয় বাছারা, পিতামাতার চেয়েও তিনি তোমাদের নিকটতর। তোমরা ফুলের মতো পবিত্র ও নির্মল। সেভাবেই থাকো। তাহলেই তিনি নিজেকে প্রকাশ করবেন তোমাদের কাছে।
প্রিয় বৎস! জানিবে, কোন বড় কাজই গুরুতর পরিশ্রম ও কষ্টস্বীকার ব্যতীত হয় নাই।
Swami Vivekananda Bengali Quotes
প্রেমই জীবন—উহাই জীবনের একমাত্র গতিনিয়ামক; স্বার্থপরতাই মৃত্যু, জীবন থাকিতেও ইহা মৃত্যু, আর দেহাবসানেও এই স্বার্থপরতাই প্রকৃত মৃত্যুস্বরূপ।
বড় হইতে গেলে কোন জাতির বা ব্যক্তির পক্ষে তিনটি বস্তুর প্রয়োজনঃ
(১) সাধুতার শক্তিতে প্রগাঢ় বিশ্বাস।
(২) হিংসা ও সন্দিগ্ধভাবের একান্ত অভাব।
(৩) যাহারা সৎ হইতে কিংবা সৎ করিতে সচেষ্ট, তাহাদিগের সহায়তা।
‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’ নিঃস্বার্থভাবে ভক্তিপূর্ণহৃদয়ে এই সকল প্রশ্নের মীমাংসার জন্য ‘উদ্বোধন’ সহৃদয় প্রেমিক বুধমণ্ডলীকে আহ্বান করিতেছে এবং দ্বেষ-বুদ্ধিবিরহিত ও ব্যক্তিগত বা সমাজগত বা সম্প্রদায়গত কুবাক্যপ্রয়োগে বিমুখ হইয়া সকল সম্প্রদায়ের সেবার জন্যই আপনার শরীর অর্পণ করিতেছে।
কার্যে আমাদের অধিকার, ফল প্রভুর হস্তে; আমরা কেবল বলি—হে ওজঃস্বরূপ আমাদিগকে ওজস্বী কর; হে বীর্যস্বরূপ! আমাদিগকে বীর্যবান কর; হে বলস্বরূপ! আমাদিগকে বলবান কর ।
বৎস ! সাহস অবলম্বন কর। ভগবানের ইচ্ছায় ভারতে আমাদের দ্বারা বড় বড় কার্য সম্পন্ন হইবে। বিশ্বাস কর, আমরাই মহৎ কর্ম করিব, এই গরীব আমরা—যাহাদের লোকে ঘৃণা করে, কিন্তু যাহারা লোকের দুঃখ যথার্থ প্রাণে প্রাণে বুঝিয়াছে। রাজা-রাজড়াদের দ্বারা মহৎ কার্য হইবার আশা অতি অল্প।
ভগবান যদিও সর্বত্র আছে বটে, কিন্তু তাঁকে আমরা জানতে পারি কেবল মানবচরিত্রের মধ্য দিয়ে।
ভগবানে বিশ্বাস রাখো। কোন চালাকির প্রয়োজন নাই; চালাকি দ্বারা কিছুই হয় না।
ভারতবর্ষ জয় করে ইংরেজের পক্ষে এত সহজ হইয়াছিল কেন? যেহেতু তাহারা একটি সঙ্ঘবদ্ধ জাতি ছিল, আর আমরা তাহা ছিলাম না।
ভারতবর্ষে আমরা গরীবদের, সামান্য লোকদের, পতিতদের কি ভাবিয়া থাকি! তাহাদের কোন উপায় নাই, পালাইবার কোন রাস্তা নাই, উঠিবার কোন উপায় নাই। ভারতের দরিদ্র, ভারতের পতিত, ভারতের পাপিগণের সাহায্যকারী কোন বন্ধু নাই। সে যতই চেষ্টা করুক, তাহার উঠিবার উপায় নাই। তাহারা দিন দিন ডুবিয়া যাইতেছে।
ভায়া, সব যায়, ওই পোড়া হিংসেটা যায় না। আমাদের ভিতরও খুব আছে। আমাদের জাতের ঐটে দোষ, খালি পরনিন্দা আর পরশ্রীকাতরতা। হাম্বড়া, আর কেউ বড় হবে না।
ভায়া, শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না। আমাদের দেশ সকলের অধম কেন, শক্তিহীন কেন?—শক্তির অবমাননা সেখানে ব’লে।
মন যখন জীবনের উচ্চতম তত্ত্বগুলি সম্বন্ধে চিন্তা করিতে অসমর্থ হয়, তখন ইহা মস্তিস্কের দুর্বলতার নিশ্চিত লক্ষণ বলিয়া জানিতে হইবে।
মনে করিও না, তোমরা দরিদ্র। অর্থই বল নহে; সাধুতাই-পবিত্রতাই বল। আসিয়া দেখ, সমগ্র জগতে ইহাই প্রকৃত বল কি না।
মানুষ যতপ্রকার জ্ঞানলাভ করিয়াছে, সবই মন হইতে। জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তোমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করিবার উত্তেজক কারণ-উপলক্ষ্য মাত্র।
মেয়ে-মদ্দ দুই চাই, আত্মাতে মেয়েপুরুষের ভেদ নাই। তাঁকে অবতার বললেই হয় না-শক্তি বাকাশ চাই। হাজার হাজার পুরুষ চাই, স্ত্রী চাই—যারা আগুনের মতো হিমাচল থেকে কন্যাকুমারী—উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু, দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়বে। ছেলেখেলার কাজ নেই—ছেলেখেলার সময় নেই—যারা ছেলেখেলা করতে চায়, তফাত হও এই বেলা; নইলে মহা আপদ তাদের। Organisation (সংঘ) চাই—কুড়েমি দূর ক’রে দাও, ছড়াও, ছড়াও; আগুনের মতো যাও সব জায়গায়। আমার উপর ভরসা রেখো না, আমি মরি বাঁচি, তোমরা ছড়াও, ছড়াও।
ভারতমাতা অন্ততঃ সহস্র যুবক বলি চান। মনে রেখো—মানুষ চাই, পশু নয়।
যত দিন না শরীর যাচ্ছে, অকপট ভাবে কাজে লেগে থাকো। আমার কাজ চাই—নামযশ টাকাকড়ি কিছু চাই না।
Swami Vivekananda Quotes In Bengali Language
যতদিন তোমরা পরস্পরের উপর ভেদবুদ্ধি না করিবে, ততদিন প্রভুর কৃপায় ‘রণে বনে র্পবত-মস্তকে বা’ তোমাদের কোনও ভয় নাই। ‘শ্রেয়াংসি বহুবিঘ্নানি’, ইহা তো হইবেই। অতি গম্ভীর বুদ্ধি ধারণ কর। বালবুদ্ধি জীবে কে বা কি বলিতেছে, তাহার খবরমাত্রও লইবে না । উপেক্ষা, উপেক্ষা, উপেক্ষা ইতি।
যদি ভাল চাও তো ঘণ্টাফণ্টাগুলোকে গঙ্গার জলে সঁপে দিয়ে সাক্ষাৎ ভগবান নর-নারায়ণের—মানবদেহধারী হরেক মানুষের পূজো করগে—বিরাট আর স্বরাট। বিরাট রূপ এই জগৎ, তার পূজো মানে তার সেবা—এর নাম কর্ম; ঘণ্টার উপর চামর চড়ানো নয়, আর ভাতের থালা সামনে ধরে দশ মিনিট ব’সব কি আধ ঘণ্টা ব’সব—এ বিচারের নাম ‘কর্ম নয়, ওর নাম পাগলা-গারদ। ক্রোর টাকা খরচ ক’রে কাশী বৃন্দাবনের ঠাকুরঘরের দরজা খুলছে আর পড়ছে। এই ঠাকুর কাপড় ছাড়ছেন, তো এই ঠাকুর ভাত খাচ্ছেন, তো এই ঠাকুর আঁটকুড়ির বেটাদের গুষ্টির পিণ্ডি করছেন; এদিকে জ্যান্ত ঠাকুর অন্ন বিনা, বিদ্যা বিনা, মরে যাচ্ছে। বোম্বায়ের বেনেগুলো ছারপোকার হাসপাতাল বানাচ্ছে—মানুষগুলো মরে যাক। তোমাদের বুদ্ধি নাই যে, এ কথা বুঝিস—আমাদের দেশের মহা ব্যারাম—পাগলা-গারদ দেশ-ময়।….
যদি শাসন করতে চাও, সকলের গোলাম হয়ে যাও। এই হ’ল আসল রহস্য। কথাগুলি রক্ষ হলেও ভালবাসায় ফল হবেই। যে-কোন ভাষার আবরণেই থাকুক না কেন, ভালবাসা মানুষ আপনা হতেই বুঝতে পারে ।
যে অপরকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়, সে কি স্বয়ং স্বাধীনতা পাইবার যোগ্য ?
যদি তুমি পবিত্র হও, যদি তুমি বলবান্ হও, তাহা হইলে তুমি একাই সমগ্র জগতের সমকক্ষ হইতে পারিবে।
যে অপরকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়, সে কোনমতেই স্বাধীনতা পাইবার যোগ্য নহে। দাসেরা শক্তি চায় অপরকে দাস করিয়া রাখিবার জন্য।
যে দেশে কোটি কোটি মানুষ মহুয়ার ফুল খেয়ে থাকে, আর দশবিশ লাখ সাধু আর ক্রোর দশেক ব্রাহ্মণ ঐ গরীবদের রক্ত চুষে খায়, আর তাদের উন্নতির কোনও চেষ্টা করে না, সে কি দেশ না নরক! সে ধর্ম, না পৈশাচ নৃত্য! দাদা, এটি তলিয়ে বোঝ—ভারতবর্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেছি। এ দেশ দেখেছি। কারণ বিনা কার্য হয় কি? পাপ বিনা সাজা মিলে কি?
যে ধর্ম বা যে ঈশ্বর বিধবার অশ্রুমোচন করিতে পারে না অথবা অনাথ শিশুর মুখে একমুঠো খাবার দিতে পারে না, আমি সে ধর্মে বা সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। যত উচ্চ মতবাদ হউক, যত সুবিন্যস্ত দার্শনিক তত্ত্বই উহাতে থাকুক, যতক্ষণ উহা মত বা পুস্তকেই আবদ্ধ, ততক্ষণ উহাকে আমি ধর্ম নাম দিই না। চক্ষু আমাদের পৃষ্ঠের দিকে নয়, সামনের দিকে-অতএব সম্মুখে অগ্রসর হও, আর যে ধর্মকে তোমরা নিজের ধর্ম বলিয়া গৌরব কর, তাহার উপদেশগুলিু কার্যে পরিণত কর-ঈশ্বর তোমাদিগের সাহায্য করুন।
যে যা বলে বলুক, আপনার গোঁয়ে চলে যাও—দুনিয়া তোমার পায়ের তলায় আসবে, ভাবনা নেই। বলে—একে বিশ্বাস কর,ওকে বিশ্বাস কর; বলি, প্রথমে আপনাকে বিশ্বাস কর দিকি।
যে সন্ন্যাসীর অন্তরে অপরের কল্যাণ-সাধন-স্পৃহা বর্তমান নাই, সে সন্ন্যাসীই নহে—সে তো পশুমাত্র!
যেখানে কোন বোধ চেতনা বা অনুভূতি আছে, সেখানে শব্দ নিশ্চয়ই আছে।
শতকরা নব্বই জন নরপশুই মৃত, প্রেততুল্য; কারণ হে যুবকবৃন্দ, যাহার হৃদয়ে প্রেম নাই, সে মৃত ছাড়া আর কি?
সমগ্র জগতের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখতে পাবে, মহাপুরুষগণ চিরকাল বড় বড় স্বার্থত্যাগ করেছেন, আর সাধারণ লোক তার সুফল ভোগ করেছে।
সহিষ্ণুতা অবলম্বন কর এবং কাজ করিয়া যাও। ‘উদ্ধরেদাত্মনাত্মানম্’।
সাধুতাই শ্রেষ্ঠ নীতি, এবং পরিণামে ধার্মিক লোকের জয় হইবেই। …বংস, সর্বদা মনে রাখিও আমি যতই ব্যস্ত, যতই দূরে অথবা যত উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গেই থাকি না কেন, আমি সর্বদাই আমার বন্ধুবর্গের প্রত্যেকের, সর্বাপেক্ষা সামান্যপদস্থ ব্যক্তির জন্যও প্রার্থনা করিতেছি এবং তাহাকে স্মরণ রাখিতেছি।
সাবধান! আমাদের মধ্যে যাহাতে কিছুমাত্র অসত্য প্রবেশ না করে। সত্যকে ধরিয়া থাকো, আমার নিশ্চয় কৃতকার্য হইবে। হইতে পারে বিলম্বে, কিন্তু নিশ্চিত কৃতকার্য হইব, এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই। কাজ করিয়া যাও। মনে কর, আমি জীবিত নাই। এই মনে করিয়া কাজে লাগো, যেন তোমাদের প্রত্যেকের উপর সমুদয় কাজের ভার। ভাবী পঞ্চাশ শতাব্দী তোমাদের দিকে চাহিয়া আছে। ভারতের ভবিষ্যৎ তোমাদের উপর নির্ভর করিতেছে। কাজ করিয়া যাও ।
স্বাধীনতাই উন্নতির প্রথম শর্ত। যেমন মানুষের চিন্তা করিবার ও কথা বলিবার স্বাধীনতা থাকা আবশ্যক, তেমনি তাহার আহার পোশাক বিবাহ ও অন্যান্য সকল বিষয়েই স্বাধীনতা প্রয়োজন—তবে এই স্বাধীনতা। যেন অপর কাহারও অনিষ্ঠ না করে।
হামবড়া বা দলাদলি বা ঈর্ষা একেবারে জন্মের মতো বিদায় করিতে হইবে। পৃথিবীর ন্যায় সর্বংসহ হইতে হইবে; এইটি যদি পারো, দুনিয়া তোমাদের পায়ের তলায় আসিবে।
হে বৎস, যথার্থ ভালবাসা কখনও বিফল হয় না। আজই হউক, কালই হউক, শত শত যুগ পরেই হউক, সত্যের জয় হইবেই, প্রেমের জয় হইবেই।
হে বীরহৃদয় যুবকগণ, তোমরা বিশ্বাস কর যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাকে ভয় পেও না—এমন কি আকাশ থেকে প্রবল বজ্রাঘাত হলেও ভয় পেও না—খাড়া হয়ে ওঠ, ওঠ, কাজ কর।
হে ভ্রাতৃবৃন্দ, আমাদের সকলকেই এখন কঠোর পরিশ্রম করিতে হইবে, এখন ঘুমাইবার সময় নহে। আমাদের কার্যকলাপের উপরই ভারতের ভবিষ্যত নির্ভর করিতেছে ঐ দেখ, ভারতমাতা ধীরে ধীরে নয়ন উন্মীলন করিতেছেন। তিনি কিছুকাল নিদ্রিত ছিলেন মাত্র। উঠ, তাহাকে জাগাও— আর নূতন জাগরনে নূতন প্রাণে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর গৌরবমণ্ডিতা করিয়া ভক্তিভাবে তাঁহাকে তাঁহার শাশ্বত সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত কর।
হে মহাপ্রাণ, ওঠ জাগো ! জগৎ দুঃখে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে— তোমার কি নিদ্রা সাজে?
হে যুবকবৃন্দ, দরিদ্র অজ্ঞ ও নিপীড়িত জনগণের ব্যথা তোমরা প্রাণে প্রাণে অনুভব কর, সেই অনুভবের বেদনায় তোমাদের হৃদয়ে রুদ্ধ হউক, মষ্তিষ্ক ঘুরিতে থাকুক, তোমাদের পাগল হইয়া যাইবার উপক্রম হউক। তখন গিয়া ভগবানের পাদপদ্মে তোমাদের অন্তরের বেদনা জানাও। তবেই তাহার নিকট হইতে শক্তিও সাহায্য আসিবে—অদম্য উৎসাহ, অনন্ত শক্তি আসিবে।
হিন্দু যেন কখন তাহার ধর্ম ত্যাগ না করে। তবে ধর্মকে উহার নির্দিষ্ট সীমার ভিতর রাখিতে হইবে, আর সমাজকে উন্নতির স্বাধীনতা দিতে হইবে।
হিন্দুধর্মের ন্যায় আর কোন ধর্মই এত উচ্চতানে মানবাত্মার মহিমা প্রচার করে না, আবার হিন্দুধর্ম যেমন পৈশাচিক ভাবে গরীব ও পতিতের গলায় পা দেয়, জগতে আর কোন ধর্ম এরূপ করে না।
হিন্দু সন্তান কখন মাকে টাকা ধার দেয় না, সন্তানের ওপর মায়ের সর্ববিধ অধিকার আছে, সন্তানেরও মায়ের ওপর।
ভারতে রজোগুণের প্রায় একান্ত অভাব; পাশ্চাত্য সেই প্রকার সত্ত্ব-গুণের। ভারত হইতে সমানীত সত্ত্বধারার উপর পাশ্চাত্য জগতের জীবন নির্ভর করিতেছে নিশ্চিত, এবং নিম্নস্তরে তমোগুণকে পরাহত করিয়া রজোগুণ-প্রবাহ প্রতিবাহিত না করিলে আমাদের ঐহিক কল্যাণ যে সমুৎপাদিত হইবে না ও বহুধা পারলৌকিক কল্যাণের বিঘ্ন উপস্থিত হইবে,ইহাও নিশ্চিত। এই দুই শক্তির সম্নিলনের ও মিশ্রণের যথাসাধ্য সহায়তা করা ‘উদ্বোধনে’র জীবনোদ্দেশ্য। যদ্যপি ভয় আছে যে, এই পাশ্চাত্যবীর্যতরঙ্গে আমাদের বহুকালার্জিত রত্নরাজি বা ভাসিয়া যায়; ভয় হয়,পাছে অসাধ্য অসম্ভব এবং মূলোচ্ছেদকারী বিজাতীয় ঢঙের অনুসরণ করিতে যাইয়া আমরা ‘ইতোনষ্টস্ততোভ্রষ্টঃ’ হইয়া যাই। এই জন্য ঘরের সম্পত্তি সর্বদা সন্মুখে রাখিতে হইবে; যাহাতে আসাধারণ সকলে তাহাদের পিতৃধন সর্বদা জানিতে ও দেখিতে পারে, তাহার প্রযত্ন করিতে হইবে ও সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক হইয়া সর্বদ্বার উন্মুক্ত করিতে হইবে। আসুক চারিদিক হইতে রশ্মিধারা, আসুক তীব্র পাশ্চাত্য কিরণ। যাহা দুর্বল দোষমুক্ত, তাহা মরণশীল-তাহা লইয়াই বা কি হইবে? যাহা বীর্যবান বলপ্রদ, তাহা অবিনশ্বর; তাহার নাশ কে করে ?
পৃথিবী আজ চায় এমন কুড়িজন নরনারী, যাহারা সামনের ঐ পথে সাহসভরে দাঁড়াইয়া বলিতে পারে যে, ভগবান্ ব্যতীত তাহাদের অন্য কোন সম্বল নাই। কে আসিবে? কেন, ইহাতে ভয় কি? যদি এটি সত্য হয়, তবে আর কিসের প্রয়োজন? আর যদি এটি সত্য না হয়, তবে আমাদের বাঁচিয়া কি লাভ?
যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই মনে হয়, বীরত্বের উপরই সব কিছু নির্ভর করে। ইহাই আমার নূতন বাণী।
মৃত্যু বা কালীকে উপাসনা করিতে সাহস পায় কয়জন? এস, আমরা মৃত্যুর উপাসনা করি। আমরা যেন ভীষণকে ভীষণ জানিয়াই আলিঙ্গন করি—তাহাকে যেন কোমলতর হইতে অনুরোধ না করি, আমরা যেন দুঃখের জন্যই দুঃখকে বরণ করি।
জিহ্বাকে যথেচ্ছ চলিতে দিলে অপর ইন্দ্রিয়গুলিও যথেচ্ছ চলিবে।
আমরা চিরকাল ধরিয়া চেষ্টা করিতেছি, আমাদের দুর্বলতাকে শক্তিরূপে দেখাইতে, ভাবপ্রবণতাকে ভালবাসা বলিয়া চালাইতে, কাপুরুষতাকে সাহসের রূপ দিতে, এবং এইরূপ আরও কত কি।
আমরা সুখ বা দুঃখ কোনটিই চাই না—এ-দুটির মধ্য দিয়ে আমরা সেই বস্তুর খোঁজ করছি, যা এই দুইয়ের ঊর্ধ্বে।
More Thoughts, Quotes, Proverbs By Swami Vivekananda